মনস্তত্ত্ব বনাম সংস্কৃতি

মানুষের কিছু আচরণ সহজই অনুমান করা যায় । কতগুলো আবার সহজে অনুমান করা যায় না । এ অধ্যায়ে মানুষের আচরণের কোন অংশ তুমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে আর কোন অংশগুলো পারবে না তা নিয়ে আলোচনা করব ।

 

মনস্তত্ত্ব

আমরা সবাই কম-বেশি প্রায় একই রকম মস্তিষ্ক নিয়ে জন্মগ্রহণ করি । খুঁটি-নাটি অনেক কিছুই হয়ত পার্থক্য বের করা যাবে কিন্তু মোদ্দাকথায় মোটামুটি একই রকম একটি যণ্ত্র  ঘাড়ের উপর আমরা সবাই বহন করে চলেছি ।

 

সুখ-দুঃখের অনুভব সবারই আছে । সবাই সম্মান চাই । বাইসাইকেল চালানো শিখতে চাই আবার আগের রাতে পার্টিতে খাওয়া টাকিলা শটের জন্য অনুশোচনাও করি । উদাহরণ স্বরূপ, Pinterest.com তৈরী হয়েছে একটি বিশেষ মনস্তত্ত্বকে অবলম্বন করে । আমরা সবাই জিনিষপত্র সংগ্রহ কর রাখতে পছন্দ করি । কেউ ডাকটিকেট, কেউ পয়সা আর কেউ বা কাগজের নোট । এটা সব মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযোয্য  । আমরা সবাই কিছু না কিছু সংগ্রহ করতে চাই ।

 

এই ক্ষেত্রে মনস্তত্ত্ব সবার জন্য সমান ভাবে কাজ করে । পরবর্তী লেখাগুলোতে মূলত এই মনস্তত্ত্ব নিয়েই জানব । আমরা সবাই এই সব বিষয়ে একই রকম আচরণ করি । এ বিষয়গুলো সবার ক্ষেত্রেই সমান ভাবে প্রযোয্য । তুমি এগুলো শিখতে পার এবং তোমার ডিজাইন বা সমস্যার সমাধানে কাজে লাগাতে পার ।

 

কারো কারো ক্ষেত্রে এই একই মনস্তত্ত্ব অন্যভাবে কাজ করে । সেটাও আমাদের একেবারে ভুলে গেলে চলবে না । মোট কথা, বাঁচতে হলে জানতে হবে ।

 

সংস্কৃতি

জন্মের পর আমরা আমদের মস্তিষ্ককে এক এক জন এক এক পথে নিয়ে যাই । কেউ হয়ত পদার্থ বিজ্ঞানে সর্ব্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে ব্যাংকে টাকা গুনার কাজ নিয়েছে । কেউ হয়তো কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে না গিয়েই জ্ঞান বিতরণ করছে । কেউবা এক পা নিয়ে রিক্সা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছে । কেউ হয়ত চার হাত পা নিয়ে অফিসার হয়ে মানুষকে বিপদে ফেলার ধান্ধা করছে! কেউবা আবার মাদ্রাসায় আরবী পড়াশোনা করে খ্রিস্টান সমাজের মানুষের উপকার করে বেড়াচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি আরো কত কি!

 

আরো উদাহরণ দিলে ব্যপারটা ভালভাবে বুঝা যাবে । সবাই সুবিচার চায় । কিন্তু কেউ হয়তো শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডকে উপযুক্ত মনে করে আবার কেউ কেউ ভিন্ন মত পোষণ করে । অথবা পিন্টারেস্টের উদাহরণটা যদি আরো বাড়িয়ে বলি: “সংগ্রহ করা” হয়তো সমস্ত মানব সমাজের ধর্ম, সবাই সংগ্রহ করতে চায় । কিন্তু কে কি সংগ্রহ করবে তা একান্তই ব্যক্তিগত । পিন্টারেস্ট তাদের প্রত্যেক ব্যবহারকারীর আগ্রহের বিষয় খুঁজে বের করতে চেষ্টা করে । কেউ হয়তো ডিজাইন সংগ্রহ করতে চায়, কেউ হয়তো বিল্ডিং এর ছবি, আবার কেউ হয়তো নাদুস নুদুস কিউটি বিড়ালের ছবি সংগ্রহ করে রাখতে পছন্দ করে ।

 

সংস্কৃতি, এই অর্থে আমাদের প্রত্যেকের জন্য ভিন্ন ভিন্ন । একই ধরণের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং ব্যক্তিত্বের মানুষের সংস্কৃতিও প্রায় একই রকম হওয়াটা স্বাভাবিক কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে নির্দিষ্ট কোন সংস্কৃতি নেই । যে কোন কিছুই হতে পারে । এ ব্যাপারে আগাম ধারণা করা সম্ভব নয় ।

 

দু’টোর পার্থক্য

মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলো-যেমন তুমি যা পছন্দ কর তা সংগ্রহ করা-সময়ের সাথে সাথে এগুলো অভ্যাসে পরিণত হয় । তখন এটাকে বলা হয় “নিখুঁত” ফিচার । এগুলো সাধারণ উদ্দেশ্যে খুব সহজে করা যায় এমনভাবে তৈরী করা হয় কিন্তু এগুলোই সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে ।

 

সংস্কৃতির বিষয়গুলো-যেমন তোমার আগ্রহের বিষয়-সময়ের সাথে সাথে এগুলোর জন্য বাড়তি কিছু লাগবে । হতে পারে নিজের মতো করে সাজানো বা বিভিন্ন ধরণ অনুযায়ী সাজানো । এগুলোকে অপটিমাইজ* করা যাবে না, কিন্তু কাস্টমাইজ** করার সুযোগ থাকে । এগুলোর উদ্দেশ্য আরো পুঙ্খানুপুঙ্খ, কিন্তু বাড়তেই থাকে সময়ের সাথে সাথে । তোমার বিড়ালের ছবিগুলো বিভিন্ন ভাবে সাজানো যেতে পারে, যেমন কাল বিড়াল, বাচ্চা বিড়ার, হুলো বিড়াল, জংলী বিড়াল, মোটা বিড়াল, শুকনা বিড়াল, প্রতিবেশির বিড়াল, প্রতিবেশি ঐ মেয়েটির বিড়ালের ছবি ইত্যাদি ইত্যাদি । এর কোন শেষ নেই । এবং যতই সময় যাবে ততই এগুলো বাড়তে থাকবে ।

 

এই বিষগুলো মনে রাখ, কারণ পরবর্তী সব লেখায় এগুলোর উপর ভিত্তি করে আমাদের ইউএক্স জ্ঞান এবং ধারণাকে আরো পোক্ত করব ।

 
* Optimize – অপটিমাইজ – কোন কিছু সবেচেয়ে দ্রুত গতিতে ও ভালভাবে করা । যেমন, একটি কাজ করতে তোমার লাগে ২ ঘন্টা, ঠিক সে কাজটি একই পরিবেশে, একই উপকরণ দিয়ে করতে তোমার বন্ধুর লাগে মাত্র ৩০ মিনিট । এখানে তোমার বন্ধু তোমার চেয়ে অপটিমাইজ ভাবে কাজটি করে ।

* Customize – কাস্টমাইজ- কোন কিছুর নিজের মতো করে সাজানো । তোমার পড়ার বা কাজের টেবিল ঠিক তোমার মনের মতো করে সাজানো। তোমার মা সেটাকে গুছিয়ে রাখলে কিছুই খুঁজে পাও না সেখানে। তোমার বন্ধুর টেবিল তার মনের মতো করে সাজানো থাকে যদিও টেবিল, টেবিলের উপরের উপকরণ  সাধারণ একই ধরণের থাকে । একেই বলে কাস্টমাইজ ।

I would LOVE to share at...
Email this to someoneShare on FacebookTweet about this on TwitterShare on LinkedInShare on Google+Share on TumblrShare on RedditBuffer this page