ইউএক্স ডিজাইনে সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে তুমি কি করতে পারবে না এবং অবশ্যই কি করবে এই দুটো যত বেশি বুঝতে পারবে ততই ভাল হবে তোমার চূড়ান্ত ডিজাইনটি বা সমাধানটি ।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডিজাইন প্রসেসের উদ্দেশ্য হলো যত বেশি সম্ভব ইন্সপিরেশন বা অনুপ্রেরণা এবং আইডিয়া যোগানো । মোড বোর্ড । ফটো । আরো অনেক কিছু আছে এমন । শৈল্পিক সৃজনশীলতার কাজ হলো তোমাকে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করা এবং সম্ভাবনা যাচাই করা ।
কিন্তু এভাবে সমস্যার সমাধানে খুব বেশিদূর আগানো যায় না । মানে এভাবে সমস্যার সঠিক সমাধান বের করা সম্ভব হয়ে উঠে না ।
কিন্তু ইউএক্স এ ব্যাপারটা ঘটে অন্য ভাবে । সমস্যাটি ভাল ভাবে বুঝতে গিয়ে তুমি যে সীমাবদ্ধতা এবং বাধা অনুধাবন করেছ সেখান থেকেই সবচেয়ে ভাল আর উপযুক্ত আইডিয়াটি বা সমাধানটি বের হবে ।
সেই সীমাবদ্ধতাগুলো তোমার সহকর্মী বা বস থেকেই আসুক অথবা আগের প্রজেক্টে কাজ করতে গিয়ে জেনেছ, সেগুলোই হলো “রিকয়্যারমেন্ট”* ।
রিকয়্যারমেন্ট তোমাকে ভুল করা থেকে বিরত রাখে
বাস্তব ক্ষেত্রে ইউএক্স কাজে তোমার কাজ কোম্পানির অন্যান্য অংশকে প্রভাবিত করে: বিক্রয় দল, প্রোগ্রামার, কার্যনির্বাহী, মোটামোটি অনেক কে । তোমার ডিজাইনের ফলে যে সব বিভাগের উপর প্রভাব পড়বে তার প্রত্যেকটার অন্তত একজন স্টেকহোল্ডারের** (গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) সাথে পূর্বেই আলোচনা সেরে নিবে ।
নিজ থেকে সমস্যা চিহ্নিত কর যেটার সমাধান করা সম্ভব । পণ্যের বা সেবার কোথায় পরিবর্তন আনা যেতে পারে, অথবা এমন কিছু চিন্তা কর যা অবশ্যই যোগ করতে হবে ।
বিক্রয় দলের দারকার এমন একটি সমাধান যা সহজেই বিক্রি করতে পারে । প্রোগ্রমাররা এমন প্রোগ্রাম লিখেছে যা পরিবর্তন করা কষ্ঠসাধ্য । নির্বাহিদের কিছু সুদূরপ্রসারী লক্ষ আছে যা অবশ্যই পূরণ করতে হবে । পিয়ন বা দারোয়ান, তারা হয়তো তোমার ডিজানের কারণে খুব বেশি প্রভাবিত হবে না কিন্তু তাদের গুরুত্ব না দিলে অফিসের অব্স্থা কি হবে আর ১০ মিনিট পর পর চা/কফির কে যোগান দিবে এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই ধারণ করতে পারছ !
স্টেকহোল্ডারের সাথে যত বেশি কথা বলবে তত ভুল কম হবে, ফলে বেশি বেশি সময় এবং অর্থ বাঁচাতে পারবে । আর খুব শীঘ্রই তোমার চাকরি না যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকবে ।
তুমি এখন একজন ইউএক্স ডিজাইনার; পরের প্রয়োজনই তোমার প্রয়োজন, পরের সমস্যাই তোমার সমস্যা । ফলে অন্যের প্রয়োজন বা সমস্যাকে নিজের মনে করে কাজ করতে হবে তোমাকে ।
স্টেকহোল্ডারদের কখনো সমাধান বা তাদের খায়েশ/ইচ্ছে জিজ্ঞেস করবে না
“রিকয়্যারমেন্ট” এবং “এক্সপেক্টেশন” বা “প্রত্যাশা” কে গুলিয়ে ফেলো না । দুইটা সম্পূর্ণ দুই বস্তু ।
যখনই কেউ বলবে আমার এটা প্রয়োজন, ওটা প্রয়োজন; মুখে এক সাগর হাঁসি নিয়ে জিজ্ঞেস কর কেন প্রয়োজন? উত্তরটিতে যখনই তুমি কোন এক্সপেক্টেশন বা মতামতের গন্ধ পাবে, আরো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে থাকবে ।
কখনও কখনও কোম্পানিগুলো খারাপ সব আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে থাকে কারণ তাদের ধারনা এর চেয়ে ভাল কোন কিছু করা সম্ভব না । অনেক অনেক অজাচিত আর অকাজের ফিচার যোগ করতে থাকে কারণ কেউ এসবের ব্যাপারে কখনও “না” শব্দটি উচ্চারণ করেনি । আর সফটওয়্যার তৈরীর ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী একটি ভুল ধারণা কাজ করে, যত বেশি ফিচার তত ভাল । কিন্তু এর চেয়ে বড় ভুল ধারণা খুব কমই আছে ।
* Requirement – কোন প্রজেক্টের প্রয়োজনীয়তার বা যে সব সীমাবদ্ধতা থাকে তার তালিকা । যেমন ধর, চা খেতে গিয়ে তুমি যেমন বল মাম্মা, ৪ চামচ চিনি দিয়েন, পুদিনা পাতা আর আদা বাড়াইয়া দিয়েন । এ সবই চা এর রিকয়্যারমেন্ট । আবার আমার বস যেমন কখনও চিনি দিয়ে চা খান না । প্রথমেই চা ওয়ালা মামাকে এটা বরে দিতে হয় । (এখন থেকে রিকয়্যারমেন্ট ই ব্যবহার করব)
** Stakeholder – কোন একটা প্রজেক্টে যারা যারা জড়িত বা প্রোডাক্ট দ্বারা প্রভাবিত হবে । এমনকি যারা শুধুমাত্র অর্থ দিয়ে সাহায্য করবে তারাও । যারা অর্থ সাহায্য করছে, যে কোম্পানি কাজটি করছে, কোম্পানির যে যে কাজটির সাথে যুক্ত, ম্যানেজার, ডেভেলপার, ডিজাইনার, প্রোগ্রামার, টেস্টার, বাজারজাতকরণ দল এবং অবশ্যই ব্যবহারকারী স্টেকহোল্ডারের আওতায় পড়ে ।